রবিবার ১১ ডিসেম্বর, সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল টেট পরীক্ষা (TET Exam 2022)। পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের পাশাপাশি আমজনতার মধ্যেও কৌতুহল ছিল, সঠিকভাবে টেট পরীক্ষা হবে তো? প্রশ্ন ফাঁসের মতো আবার কোনও গোলযোগ দেখা দিলে কী হবে, কোথাও কোনও গণ্ডগোল হবে না তো এমনও হাজারো প্রশ্ন ঘুরে বেড়িয়েছে মানুষের মুখে মুখে। দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত যতক্ষণ না টেট পরীক্ষা শেষ হয়েছে, ততক্ষণ এই উত্তেজনা জিইয়ে ছিল। তারপর অবশ্যই ধীরে ধীরে টেট নিয়ে উত্তেজনা কমেছে।
প্রাইমারি পর্ষদ সভাপতির মতে এবারের টেট পরীক্ষা খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। কথাটা অনেকটাই সত্যি। যদিও এরই ফাঁকে টেট নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ যেমন উঠে এসেছে, তেমনই পরীক্ষার্থীদের একাংশের থেকে কমপ্লিমেন্ট পেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এখন দিনের শেষে পৌঁছে মূল প্রশ্ন- সবমিলিয়ে কেমন হল টেট পরীক্ষা?
রাজ্যজুড়ে কেমন হল ২০২২ এর টেট পরীক্ষা?
সেই ২০১৭ সালে শেষ টেট হয়েছিল। তারপর আবার এই পরীক্ষা হল। এবার নজিরবিহীন নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল টেটকে কেন্দ্র করে। সেইসঙ্গে এই পরীক্ষা সফল করতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পাশাপাশি গোটা রাজ্য প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স, সিসি ক্যামেরা, ১৪৪ ধারা জারির মতো বড় বড় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
রাজ্যের মোট ১৪৬০ টি পরীক্ষাকেন্দ্রে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩২ জন টেট পরীক্ষায় বসেন। সার্বিকভাবে বলতে গেলে কোথাওই বড় কোনও অশান্তি বা গণ্ডগোল হয়নি। তবে বিক্ষিপ্ত কোনও কিছুই একেবারে যে ঘটেনি তেমনটাও নয়।
বোলপুর এবং ধূপগুড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রের দরজা বন্ধের আগেই কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। পরীক্ষার্থীরা কোথায় ব্যাগ রাখবেন তা নিয়ে বিতর্ক ছড়ায়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ওই দুই জায়গার দুই পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ রাখার বন্দোবস্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। তার জেরে কিছুক্ষণের জন্য পথ অবরোধ করেন টেট পরীক্ষার্থীরা। যদিও দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স নিয়ে সমস্যা
তবে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স ঠিক করে কাজ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম ছিল, বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্সের মাধ্যমে আসল পরীক্ষার্থী চিহ্নিত করে তবে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় দেখা যায় পরীক্ষা শেষের পর বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্সের মাধ্যমে হাজিরা নথিবদ্ধ করা হচ্ছে।
তবে কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শেষের পরেও বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স ব্যবস্থা ঠিক করে কাজ করেনি বলে অভিযোগ। শেষে ওই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে সাদা কাগজে হাতে লিখে পরীক্ষার্থীদের অ্যাটেনডেন্স নেওয়া হয়। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের একাংশ এর ফলে নতুন সমস্যা তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অ্যাডমিট কার্ডে থাকা পরীক্ষাকেন্দ্রের ভুল ঠিকানা
বেশ কিছু জায়গায় অ্যাডমিট কার্ডে থাকা পরীক্ষাকেন্দ্রের ঠিকানা ভুল ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। যেমন খড়দহের কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠে পরীক্ষার্থীদের সিট ছিল। কিন্তু তাঁদের অ্যাডমিট কার্ডে লেখা ছিল- দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের কথা। পরবর্তীতে পর্ষদ অ্যাডমিট কার্ডের এই ভুল সংশোধন করলেও তা সব পরীক্ষার্থীর নজরে আসেনি।
ফলে আসল পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে অনেকেই প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পৌঁছে যান। এই পরীক্ষার্থীরা অনেকেই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় বসতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সঠিক পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে হাজির হলেও পরীক্ষা শুরুর অনেকটা পর পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এমন ঘটনা আরও কয়েক জায়গায় ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২২ টেট নিয়ে মামলা হওয়ার আশঙ্কা
পরীক্ষাকেন্দ্র নিয়ে এই বিভ্রাটের জেরে টেট পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপর প্রবল ক্ষুদ্ধ। তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছেন বলে জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ফের আদালতে ২০২২ টেট নিয়ে মামলা দায়ের হওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
এদিকে টেট পরীক্ষা চলাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল (Goutam Pal) সল্টলেকের বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে দেখেন। পরীক্ষা শেষের পর বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সহযোগিতা করার জন্য রাজ্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। জানান, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সব সময় পাশে ছিলেন। তিনি সাহায্য না করলে সঠিকভাবে টেট আয়োজন করা সম্ভব হতো না বলে দাবি করেন গৌতম পাল।
এদিকে টেট পরীক্ষা শেষের কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু দাবি করেন, পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি বিরোধীদের একাংশকে নিশানা করে বলেন, টেট পরীক্ষা বানচাল করতে বাজারে ভুয়ো প্রশ্নপত্র ছাড়া হয়েছিল। যদিও তাতে পরীক্ষায় কোনও প্রভাব পড়েনি বলে শিক্ষামন্ত্রী দাবি।
সবমিলিয়ে বড় কোনও ঘটনার না ঘটলেও টেট নিয়ে বিক্ষিপ্ত নানান ঘটনারই সম্মুখীন হয়েছে রাজ্য। এখন দেখার পরবর্তীতে কী ঘটে।
বিঃদ্র: নতুন কোনো চাকরির আপডেট মিস করতে না চাইলে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান। নিচে যুক্ত (Join) হওয়ার লিংক দেওয়া রয়েছে ঐ লিংকে ক্লিক করলেই যুক্ত হয়ে যেতে পারবেন। ওখানেই সর্বপ্রথম আপডেট দেওয়া হয়। আর আপনি যদি অলরেডি যুক্ত হয়ে থাকেন এটি প্লিজ Ignore করুন।
Important Links: 👇👇
✅ কাজকর্ম WhatsApp গ্রুপে জয়েন হোন | Click Here |
✅ Telegram Channel | Join Now |
🔥 আরো চাকরির আপডেট 👇👇
🎯 প্রাইমারি টেট ২০২২ প্রশ্নপত্র ডাউনলোড
🎯 রেলের TTE পদে প্রচুর নিয়োগ- বিরাট আপডেট!
🎯 পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরির জন্য লোক নেওয়া হচ্ছে