সরকারি চাকরি এবং বেসরকারি চাকরির মধ্যে কোনটি ভালো? এগুলির সুবিধা ও অসুবিধা!

Government Or Private job which is better in bengali

পড়াশোনা শেষ করার পর বা পড়াশোনা চলাকালীন প্রায় সকলেই কোনো একটি চাকরি জোগাড় করার কথা ভাবে। তবে অনেকে আবার চাকরি না করে ব্যাবসা বা অন্য কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়। যদিও এটি আমাদের আলোচলার বিষয় না। আজকের আলোচনার বিষয় হল- সরকারি চাকরি না বেসরকারি চাকরি, কোনটি ভালো?

আপনিও হয়ত কোনো চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেটা সরকারি বা বেসরকারি হতে পারে। বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অধিক প্রতিযোগীতা হওয়ার কারনে অনেকেই বেসরকারি কোনো সংস্থায় কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করছে। তবে বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কি কি সুবিধা বা অসুবিধা আছে তা অনেকেরই জানা থাকে না।

তাই আজকে আমরা সরকারি চাকরি এবং বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারে জানাবো। আশা করছি, সম্পূর্ন লেখাটি পড়লে এই বিষয়ে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

সরকারি চাকরি ও বেসরকারি চাকরির তুলনা

সরকারি চাকরি এবং বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা জানার আগে এই দুই ক্ষেত্রের চাকরির একটি তুলানামূলক আলোচনা করা হল-

১. নিয়োগ প্রক্রিয়া

➡️ সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে অনেক সময় লেগে যায়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, মেন পরীক্ষা, ইন্টারভিউ ইত্যাদির কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশি সময় লেগে যায়।

➡️ বেসরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব কম সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে সরকারি ইন্টারভিউ, গ্রুপ ডিসকাসন এর মাধ্যমে নিয়োগ করানো হয়, ফলে সময় অনেক কম লাগে।

২. কাজের চাপ

➡️ সরকারি চাকরিতে কাজের চাপ বা স্ট্রেস কম থাকে।

➡️ বেসরকারি চাকরিতে কাজের চাপ বেশি থাকে।

৩. বেতন

➡️ সরকারি চাকরির জন্য একটি নির্দিষ্ট পে স্কেলে বেতন দেওয়া হয়। বেশি কাজ করলেও বেতন বেশি দেওয়া হয় না।

➡️ বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বেতন কম বেশি হয়ে থাকে। এটা কর্মচারির কাজের স্কিলের উপর নির্ভর করে। তাছাড়া বেশি কাজ করলে কোম্পানির তরফ থেকে অধিক টাকাও দেওয়া হয়।

৪. পদোন্নতি

➡️ সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি বা পদের উন্নতির সুযোগ খুবই কম থাকে।

➡️ বেসরকারি কাজের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পদোন্নতির সুযোগই সুযোগ। তবে এক্ষেত্রে কাজকে ভালোবাসতে হবে এবং কাজটি মন দিয়ে করতে হবে। তা না হলে পদোন্নতির কথা একেবারে ভুলে যাওয়ায় ভালো।

৫. কাজের পরিবেশ

➡️ সেই পুরোনো কাজের পদ্ধতিতেই সরকারি কর্মচারীদের কাজ চলছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসের সেই ধুলোমাখা ফাইল এর প্রমান।

➡️ আর বেসরকারি অফিসের কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেশি করানো হচ্ছে। এতে অনেক কম সময়েই কাজ হয়ে যায়।

সরকারি চাকরির সুবিধা

  • কাজের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা অর্থাৎ দৈনিক ৮ ঘন্টা। এর বেশি কাউকে কোনোভাবে কাজ করানো যাবে না।
  • কাজের নিরাপত্তা বা স্থায়িত্ব থাকে। চাকরি চলে যাওয়ার কোনো ভয় থাকে না।
  • কাজের চাপ অনেক কম হয়।
  • অবসরকালে পেনশনের সুবিধা পাওয়া যায়।
  • যথেষ্ট পরিমানে ছুটি পাওয়া যায়।

সরকারি চাকরির অসুবিধা

  • নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে অনেক সময় লেগে যায়।
  • অনেক কম সংখ্যক ভ্যাকান্সি বের হয়।
  • বেতন বৃদ্ধির হার অনেক কম।
  • Colleague বা সহকর্মীদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে সুসম্পর্কের অভাব।
  • কাজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা থাকে না। এর ফলে পদোন্নতি ঘটে না বা নতুন কিছু শেখার সম্ভাবনা থাকে না।

বেসরকারি চাকরির সুবিধা

  • নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হয়।
  • বাড়িতে থেকেও কাজ করা যায় বা Work From Home করা যায়। অর্থাৎ কাজের ক্ষেত্রে বাঁধাধরা সময় থাকে না। লকডাউনের সময় এর প্রমানও পেয়েছি আমরা। তবে এটি সমস্ত বেসরকারি চাকরির জন্য প্রযোজ্য নয়। 
  • কাজের ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত বেতন বৃদ্ধি এবং পদোন্নতির সুযোগ থাকে।
  • স্বাধীনভাবে সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ থাকে।

বেসরকারি চাকরির অসুবিধা

  • বেসরকারি চাকরির নিরাপত্তা সরকারি চাকরির তুলনায় কিছুটা কম থাকে। এটি কোম্পানি বা কোনো সংস্থার উপর নির্ভর করে। বড়ো বড়ো কোম্পানিতে এই সমস্যা থাকেনা বললেই চলে।
  • নির্ধারিত কাজের সময়ের বাইরেও কাজ করিয়ে নেওয়া হয়।
  • ছুটির পরিমান অনেক কম থাকে। বিভিন্ন ছুটিতে কাজের চাপ বেশি থাকলে বেসরকারি কোনো কোম্পানি তাদের কর্মচারিদের ছুটি দেয় না। তবে এক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত টাকাও দেওয়া হয়।
  • পেনশনের সুবিধা থাকে না।

এগুলোও পড়ুন- 

চাকরি ও কাজের আপডেট মিস না করতে চাইলে আমাদের ‘টেলিগ্রাম চ্যানেলে’ যুক্ত হয়ে যান

সরকারি চাকরি এবং বেসরকারি চাকরির মধ্যে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা রয়েছে। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বেসরকারি চাকরিরও সুবিধা কম আছে এমন কিন্তু নয়। সেটাও আপনি হয়তবা বুঝতে পেরেছেন। আর বর্তমানে এবং আগামী দিনে বেসরকারি চাকরির প্রতি মানুষের আরো বেশি ঝোক বাড়বে। কেননা আগামী কয়েক বছরে সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগীতা আরো বাড়তে চলেছে।