শিক্ষাক্ষেত্রের আন্দোলনে মধ্যরাতে পুলিশি অভিযানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গবাসীর পরিচয় বহু পুরনো। এই মুহূর্তে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সল্টলেকের করুণাময়ীতে আন্দোলনরত টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের উপর পুলিশের দমনপীড়ন নিয়ে উত্তাল হয়ে আছে গোটা রাজ্য। অনেকেই সেই ঘটনার ছবি, ভিডিও দেখে শিউরে উঠছেন।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে কেউ? এই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের মধ্যে। বিরোধীরা এই নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তবে এই ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও বারেবারে মধ্যরাতে বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে পুলিশ অভিযান চলেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে “হোক কলরব” মনে আছে?
২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। সেইসময় মধ্যরাতে পুলিশি ডেকে আন্দোলন তোলার চেষ্টা করেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। সেই রাতের ঘটনা আজও অনেকের মনে দগদগে হয়ে আছে। আন্দোলনকারীদের উপর হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। টেনেহিঁচড়ে তাদের বের করে দেওয়া হয়।
এর পর আন্দোলন আরও দ্বিগুণ উদ্যোমে শুরু করে যাদবপুরের পড়ুয়ারা। উপার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর ইস্তফার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে জানিয়ে দেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সময়ই এইট-বি থেকে ঢাকুরিয়া সেতু হয়ে গোলপার্ক পর্যন্ত মশাল হাতে যাদবপুরের ছাত্রদের বিশাল মিছিল সারা রাজ্যে সাড়া ফেলে দেয়। বহু সাধারণ মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। এখানেই উঠেছিল সেই বিখ্যাত স্লোগান ‘হোক কলরব’।
শেষপর্যন্ত মাস কয়েক পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঘোষণা করেন উপাচার্যকে সরানো হবে। এই শুনে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা। কারণ তাঁদের আন্দোলন সেদিন জিতে গিয়েছিল। প্রবল শক্তিধর শাসক বাধ্য হয় মাথা নোয়াতে। এবং এর কয়েকদিন পরই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদল হয়।
রাজ্যে বারবার পুলিশের ‘মিড নাইট’ অপারেশন
তবে টেট পাশ আন্দোলনকারীদের আগে শুধু যাদবপুর নয়, গত কয়েক বছরে পার্শ্বশিক্ষক হোক বা নার্সিং স্টুডেন্ট, বারবার পুলিশের ‘মিড নাইট’ অপারেশনের সাক্ষী থেকেছে রাজ্যবাসী। টেনেহিঁচড়ে তুলে কখনও শিয়ালদহ, আবার কখনও এসপ্ল্যানেডে ছেড়ে দিয়ে আসত ওই রাতের অন্ধকারেই। নায্য দাবি নিয়ে পথে নামা শিক্ষাক্ষেত্রের এই আন্দোলনকারীরা তখন ধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন, কিন্তু তাতে এতোটুকু মন গলেনি প্রশাসনের।
বস্তুত যাদবপুরের মতো ভাগ্য বাকি আন্দোলনকারীদের সুপ্রসন্ন হয়নি। এই যে টেট পাল্লা দীর্ঘদিনের দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, তার ফল তো শেষ পর্যন্ত পুলিশি নির্যাতন দিয়েই শেষ হল। এবং আপাতত সরকারই ‘আপার হ্যান্ড’ আছে। কারণ এতোকিছুর পরেও সেই পূর্ব ঘোষণা মতো মাত্র ১১ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষক নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। অর্থাৎ, ২০১৪ এর টেট পাশ সকলকে নিয়োগের দাবি মানতে নারাজ তারা!
শিক্ষাক্ষেত্রে মধ্যরাতে পুলিশি পাঠানো অবশ্য রাজ্যে নতুন কিছু নয়। বারবার এই সরকারের আমলে আন্দোলন সাড়া ফেললেই পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমান শাসকদের আমলেই শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্য বিরাজ করেছে ভাবলে ভুল হবে।
২০০৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংসদের ফেটসুর নেতৃত্বে চলা আন্দোলন থামাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পুলিশও একইরকমভাবে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকেছিল। সেবারেও টেনেহিঁচড়ে পড়ুয়াদের তুলে দেয় পুলিশ। সেই ধারাবাহিকতা আজও চলছে বাংলায়। তবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যা হয়েছে তা বোধহয় সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
✅ কাজকর্ম Whatsapp গ্রুপে জয়েন হোন- Click Here
👍 আমাদের ‘টেলিগ্রাম চ্যানেলে’ যুক্ত হতে চাইলে নিচে ক্লিক করুন, এখানে সর্প্রথম আপডেট দেওয়া হয়।
🔥 আরো আপডেট 👇👇
🎯 রাজ্যের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ফেরানোর জন্য সরকারি নির্দেশ
🎯 রাজ্যে প্রাইমারি নিয়োগের জেলা ভিত্তিক শূন্যপদ প্রকাশিত হলো
🎯 কলেজে চাকরি পাওয়া আরো সহজ হলো