সরকারি স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এই দুর্নীতির অভিযোগেই জেলে যেতে হয়েছে। এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহাও গ্রেফতার হয়েছেন।
এমনকি দমকলে নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের যে কোনও সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হয়ে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?
সদ্য নবান্নে হয়ে যাওয়া প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষা দফতর সহ রাজ্য সরকারের প্রতিটি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া যেন একদম স্বচ্ছ হয়।
ক্যাজুয়াল এবং কন্ট্রাকচুয়াল, অর্থাৎ অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দফতরের নিয়োগ কমিটির ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করেছেন। সেই সঙ্গে অর্থ দফতরের অনুমতি ছাড়া চুক্তিভিত্তিক পদেও নিয়োগ করা যাবে না বলে মন্ত্রী এবং সচিবদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অর্থাৎ এইবার থেকে কোনো নিয়োগ হলেই আগে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার নিয়মটি না মানলে কোনোভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে না। দুর্নীতি রুখতেই এমন উদ্যোগ বলে অনেকে মনে করছেন।
হঠাৎ এতো কড়াকড়ি কেন?
স্কুল শিক্ষা দফতরের এসএসসি, অর্থাৎ দশম ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের কথা সকলেরই জানা। পরবর্তী পর্যায়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তও শুরু করেছে সিবিআই। সেখানেও দুর্নীতি ও বেআইনি আর্থিক লেনদেনের একের পর এক ঘটনা প্রকাশ্যে উঠে আসছে।
কিন্তু শুধুমাত্র শিক্ষা দফতরই নয়, দমকল বিভাগের হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়ম, লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে আদালতে মামলা দায়েরও হয়েছে। শোনা যাচ্ছে অর্থ দফতরের অনুমতি ছাড়াই দমকলের ক্যাজুয়াল স্টাফদের একাংশকে নিয়োগ করা হয়েছে।
রাজ্যে একাধিক নিয়োগে দুর্নীতির ছাড়াছড়ি
রাজ্যের বনদফতরের অধীনে থাকা বন সহায়ক পদেও নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর এই সমস্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দফতরের নিয়োগ কমিটির বৈঠক না ডেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের ছাড়পত্রের আগেই অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করে ফেলা হয়েছে।
জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত ও পুরসভায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের বহর ভয়াবহ জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে উঠতে থাকা অভিযোগের স্রোত সামলাতে এবং স্বচ্ছ পথে নিয়োগ করে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যে কয়েক লক্ষ শূন্যপদ ফাঁকা
এছাড়াও নবান্নের ওই প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের ফাঁকা শূন্য পদগুলিতেও দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। উল্লেখ্য রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র মারফত খবর, স্কুল ও কলেজের শিক্ষক এবং অশিক্ষক পদ, দমকল, স্বাস্থ্য দফতর সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে কমপক্ষে ৪ লক্ষ স্থায়ী শূন্য পদ পড়ে আছে।
সঠিক সার্ভে করলে এই শূন্য পদের সংখ্যা আরও অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে। এখন দেখার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য রাজ্য সরকার একধাপে এই বিপুল শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেয় কিনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্য সরকার যদি সমস্ত শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেয় তবে রাজ্যের বেকারী সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে। তবে রাজ্য সরকারের কোষাগারের যা অবস্থা তাতে একসঙ্গে এতো বিপুল শূন্য পদ পূরণ সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে পারেনি রাজ্য। উল্টে প্রায় আড়াই মাস পর ফের তারা রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
👍 এই রকমের চাকরি ও কাজের আপডেট মিস না করতে চাইলে আমাদের ‘টেলিগ্রাম চ্যানেলে’ যুক্ত হয়ে যান
এগুলোও জেনে রাখুন 👇👇
- রাজ্যের সরকারি স্কুলে গেস্ট টিচার নিয়োগ
- তৃণমূল আমলে যারা চাকরি পাওয়া লোকেদের জন্য এলো সরকারি নির্দেশ
- নতুন প্রাইমারি টেট 2022 নিয়ে খারাপ আপডেট